ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে ‘আগে আসলে আগে ক্রয় করা হবে’ ভিত্তিতে ধান ক্রয় করতে হবে, সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের নীতিমালায় এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত ৩মাসে এখানে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১১শ’৭০মেঃটন। আর এই ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনার বদলে কেনা হয়েছে প্রভাবশালী, নেতা ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে। অথচ কৌশলে বিক্রয় তালিকাটি করা হয়েছে কৃষকদের নামে। জানা গেছে, এ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ১৭শ’৪৯মেট্রিক টন ধান কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ১১শ’৭০মেঃটন। গত ১৯মে’ থেকে এখানে সরকারী ধান ক্রয় শুরু হয়ে ২৫জুলাই শেষ হয়। কিন্তু ২৬জুলাই বিক্রির জন্যে ট্রাক ভর্তি ধান নিয়ে আসে একাধিক কৃষক। তদেরকে ধান ক্রয়ের শেষ তারিখ অফিস থেকে জানানো হয়নি। একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩মেঃটন ধান খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে পারবে। সরকার প্রতি কেজি ধান কিনবে ২৩টাকা দরে। এখানে খাদ্য গুদাম রয়েছে ৭টি। এর ধারন ক্ষমতা হচ্ছে ৩হাজার ৫শ’মেঃটন। উপজেলায় লাইসেন্সধারী ১৯টি রাইসমিল রয়েছে।
এসব ধান কেনা হয়েছে দলীয় নেতা ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে। ভুয়া কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে ওই ধান ক্রয় দেখানো হয়েছে। তালিকাভূক্ত কৃষকরা জানে না যে- আগের বাতিল করা কৃষি সহায়তা কার্ড দেখিয়ে সরকারি গুদামে তাদের নামে ধান বিক্রি করা হয়েছে। যেসব কৃষকের নাম ব্যবহার করে ধান বিক্রি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই গরিব কৃষক। যারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কোনো রকমে দিন যাপন করছে। ধান বিক্রি তো দূরের কথা ধান চাষ করে সারা বছরের খোরাকও জোটে না তাদের। খাদ্য গুদামে বিক্রির তালিকার নাম থাকা কৃষকদের নিজের কোন জমি নেই। জনৈক কৃষক কৃষি উপকরণ সহায়তার মূল কার্ড দেখিয়ে বলেন, বাতিল করা কার্ড স্থানীয় গ্রাম পুলিশ নিয়ে নতুন এই কার্ডটি তাকে দিয়েছে। বাতিল কার্ডটি কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করে কে তার নামে ধান বিক্রি করেছে তা তিনি জানেন না।
জানা গেছে, যেসব কার্ড ২০১৪সালের জুন মাসের পূর্বেই বাতিল করা হয়েছে। ওই কার্ডে কৃষক সরকারি কোনও সহায়তা পাবে না। বাতিল হওয়ার পর কৃষকদের সরবরাহ করা যে কার্ডটিতে মুদ্রণ জুন-২০১৪ লেখা আছে সেটিই বর্তমানে বৈধ কার্ড। এখানে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ না করায় ফড়িয়ারা লাভবান হয়েছে। আর কৃষকরা ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে। ক্রয়কৃত ধানের নমুনা যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করে সঠিক পাওয়া যায়নি এমন অভিযেগও কৃষকদের। এছাড়া যেসব কৃষকের কার্ড আছে তারা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের ধানে আর্দ্রতা বেশী বলে ধান ক্রয় না করে হয়রানি করছে। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকরা ধান ফিরিয়ে এনে হাট-বাজারে কম দামে বিক্রি করছে। এখানে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের নির্দেশ দিলেও সংশি¬ষ্ট খাদ্য গুদাম পরিদর্শক তা গোপন রেখে ভিন্ন পন্থায় ধান ক্রয়ের চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন এমন অভিযোগও কৃষকদের। এ নিয়ে প্রান্তিক, বর্গা ও ক্ষুদ্র কৃষকরা ৩মাস মেয়াদে ধান দিতে পারেননি। এসব অনিয়মের জন্যেই সরকারের ধান ক্রয় কর্মসূচি এখানে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ছাতক খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রব জানান, ২৫জুলাই থেকে ধান ক্রয় শেষ হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাহাব উদ্দিন ৩টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। এতে কোন অনিয়ম করা হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ধান না পাওয়ায় লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এ জন্যে ১৭শ’৪৯মেট্রিক টন ধান কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ১১শ’৭০মেঃটন।